ও শিট ৯:১০ বাজে....!!
আজকেও লেইট।।
.
বিপ্লব আজকেও ঘুম থেকে দেরিতে উঠেছে। ভার্সিটির ক্লাস সকাল ৯টায়। আর সে উঠেছে ৯:১০ এ। এবার বুঝুক মজা...!! সে প্রতিদনই দেরিতে উঠে আর দেরিতে ক্লাসে যায়। প্রতিদিনই সে টিচার্সদের বকা খায়। হয় চোখ কচলাতে কচলাতে, নাহয় স্যার ঢুকবে ঢুকবে এই অবস্থা, আবার স্যার এই মাত্র ঢুকেছে ঠিক সেমসয়ই বিপ্লব ক্লাসে ঢুকে। কিন্তু আজতো কোনটাই হবেনা...!! টাইম ওভার হয়ে গেছে। তবুও সে তাড়াহুড়ো করে রেডি হয়।
---মা, তুমি আমাকে ডাক দেওনি কেন...??(বিপ্লব)
--এই একদম মিথ্যা কথা বলবিনা..!! সেই সকাল থেকে ডাকছি উঠার কোন নাম নেই। এখন আসছে আমাকে দোষ দিতে। (বিপ্লবের মা)
---তুমি আমাকে ডাক দিছো...??
--শুধু কি ডাকই দিছি, কান ধরে তোলতে চাইছিলাম। তুই শুধু বলিস আর একটু ঘুমাই, আর একটু ঘুমাই মা।। এখন হলো....!!
---কই তুমি আমারে ডাক দিছো....??
--এবার কিন্তু মার খাবি।
---আচ্ছা, আমি এখন যাই।
--আরে, নাস্তা খেয়ে যা। টেবিলে রাখা আছে।
---মা, এখন সময় নেই। পরে খাব....!!
--এই শোন, শোন, নাস্তাটা খেয়ে যা।..... যাক বাবা, চলেই গেল।। এই ছেলেকে নিয়ে আমি আর পারিনা।।
.
শত তাড়াহুড়ো করেও ক্যাম্পাসে আসতে আসতে ৯:৩০ বেজে গেল। ইসসসসসসস, আজকেও স্যারের বকা খেতে হবে। আর ইতর মেয়েগুলো দাঁত বের করে হাসবে। মনে হয় ওরা ক্লোজ-আপ পেষ্টের বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। ইচ্ছে করে সবগুলোকে ইচ্ছেমত দিই। স্বপ্নেই ওদেরকে মেরে ফেলি।
---কিরে বদমাইশের হাড্ডিরা, তোরা এখানে এভাবে বসে আছিস কেন....?? ক্লাস করবিনা...??(বিপ্লব)
--না করবো না। (তুহিন)
--তুই কি ক্লাস করতে এসেছিস....??(রোহান)
---তোদের কি মনে হয়..?? বসে থাকতে?? (বিপ্লব)
--আরে প্যাচাল বাদ দিয়া যা ক্লাসে যা ক্লাস করতে যা.....!! আমরা তো হুদায় এখানে বসে আছি তাই না..?? যাও সুবল স্যার ক্লাসে আছে, যাও তুমি ক্লাস করতে যাও (রঙিলা-ঢঙিলা মুখে): (মেঘলা)
---সুবল স্যার...!!(বিপ্লব)
--কি হয়েছে..?? এমন আতকে উঠলি কেন..?? যা ক্লাসে যা...!!(রোহান)
---(একটু ভয়ে ভয়ে ভীতু গলায়) তোরা কি গেছিলি ক্লাসে....??(বিপ্লব)
--আরে বেটা মাত্র পাঁচ মিনিট লেইট হইছিল। সুবল স্যার মহাজ্ঞানী, আমাদের টাইম সম্পর্কে পাঁচ মিনিট ক্লাস নিয়ে চলে যেতে বললেন। আর উনি এসেছেন আধাঘন্টা লেইটে। যান যান আপনি ক্লাসে যান.....!!(তুহিন)
---দোস্ত, তোরা এমন করছিস কেন...?? আমরা আমরাই তো...!!(বিপ্লব)
--তাইলে আবার ভাব লস কে...??(মেঘলা)
---কই ভাব লইলাম...?? এমন করস কে তোরা..??(বিপ্লব)
--হইছে, হইছে আর বুঝাইতে হবেনা...!!(রোহা
ন)
--এখন আর মাত্র ১৫ মিনিট অপেক্ষা কর তোরা। সুবল স্যারের ক্লাসটা শেষ হলেই আমরা ক্লাসে ঢুকে পড়বো। (মেঘলা)
---হুমমমমমমম, এখনতো এটাই করতে হবে।।(বিপ্লব)
.
১৫ মিনিট পর.....
---দোস্ত ক্লাস শেষ...চল ঢুকে পড়ি!!(বিপ্লব)
--এই দাঁড়া, দাঁড়া, দেখ সবাই বের হয়ে যাচ্ছে। কি ব্যাপার..?? (মেঘলা)
--ও তাইতো...!!(বিপ্লব)
--কিছু একটা হইছেতো...??(রোহান)
--দোস্ত......??(মেঘলা)
---কি...?? (বিপ্লব)
--দোস্ত.....??(মেঘলা)
---আরে কি.... বলনা..!!(বিপ্লব)
--দেখ, কে আসছে...!!(মেঘলা)
---কে আসছে..??(বিপ্লব)
--দেখ, কে আসছে..?? তোর জান আরোহী আসছে....!!(মেঘলা)
---জান আরোহী আসছে তো কি হইছে...??(বিপ্লব)
--আরে তোর আরোহী আসছে.....(মেঘলা)
---আমার আরোহী.....ও আরোহী আসছে.....!! কোথায় আরোহী....?? কোথায়..??(বিপ্লব)
--এই যে এদিকেই আসছে..!!(মেঘলা)
---ও এদিকেই আসছে.... কিছু বলবে মনে হয়....হিহিহিহিহি!!! আরোহী আসছে। (বিপ্লব)
--দাঁত বন্ধ কর....!!(মেঘলা)
--হাই মেঘলা, কোথায় ছিলি এতক্ষণ...?? (আরোহী)
--এখানেই বসে ছিলাম। দেখিস না পাঁচ মিনিট দেরিতে আসছি বলে স্যার ক্লাস করতে দিল না...!!(মেঘলা)
--হুমমমম, দেখেছিই তো।। হাই বিপ্লব, কেমন আছো...??(আরোহী)
---ওহ হ্যাঁ তুমি, আরোহী...হাই...কেমন আছো....?? (বিপ্লব)
--হুমমমম, ভালো। তুমিও আজ লেইট....??(আরোহী)
---না মানে হ্যাঁ মানে না......হুমমমমমম লেইট।।(বিপ্লব)
--আরে আমরা তো মাত্র পাঁচ মিনিট লেইট। আর ওর তো পুরো আধাঘন্টা লেইট।।(মেঘলা)
--হিহিহিহিহি......!! তুমি প্রতিদিনই লেইট করো....!! সকালে উঠতে পারোনা...??(আরো
হী)
---হ্যাঁ.... না। এই বদমাইশগুলো একটাও আমারে ফোন দেয়না। ওরা নিজেরা নিজেরাই ক্যাম্পাসে চলে আসে। আমাকে একবারও বলেনা...!! খুব খারাপ..!!(বিপ্লব)
--ও তাই....?? তাহলে তোমার নাম্বারটা আমাকে দিও....আমি সকালে ফোন দিয়ে তোলে দিব।।(আরোহী)
---০১৬****..............(বিপ্লব)
--আরে এখন না। রাতে ফেবুতে দিও...!!(আরোহী)
--এই আরোহী, সবাই চলে এসেছে কেন..?? আর ক্লাস হবেনা?? (মেঘলা)
--না রে, আজ নাকি টিচার্সদের মিটিং আছে। তাই একটা ক্লাস শেষ করেই বিদায় দিয়ে দিল।(আরোহী)
--ও এই কথা।।(মেঘলা)
---তাইলে তো আজকে আর ঝামেলা নাই। শুধু শুধু ঘুম থেকে উঠে ক্যাম্পাসে আসলাম। টিচার্সদের মিটিং আছে আগে বললেই....... (বিপ্লব)
--এই তোর কি ক্লাস করতে ভালো লাগেনা..??(মেঘলা)
---লাগে, কিন্তু সবসময় না।। (বিপ্লব)
--হিহিহিহিহি......!! (আরোহী)
.
---আরোহী শুনো, একটা কথা...!(বিপ্লব)
মেঘলা খুব মনযোগ দিয়ে বিপ্লবের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আজ বলেই দিবে। ইসসসসসসস, বলে দে ছাগল। এক্ষুণি বলে দে তুই আরোহীকে ভালোবাসিস..!! কাম অন বিপ্লব....কাম অন। -মনে মনে মেঘলার প্রার্থনা।
--হুমমম, বলো...!!(আরোহী)
---না মানে.....??
--(বলে দে ছাগল কোথাকার.....ভয় পাস না!! বলে দে.......) (মেঘলা)
---না মানে, আজ কি পড়াইছে স্যার.....??)(ব
িপ্লব)
(দুর...গাঁধা কোথাকার....?? মন চাচ্ছে এখনি দু'গালে কষিয়ে থাপ্পর দিতে। এতদিন হয়ে গেল এখনো আরোহীকে ওর মনের কথাটা বলতে পারছেনা।-মেঘলা)
--আমি যাই....রে। দেখি ঐ দুই ছাগল কোথায় গেছে...?? হুট করে কোথায় হারিয়ে যায় যে খুঁজে পাওয়া যায় না...!! (আর যাওয়ার সময় বিপ্লবের দিকে তাকিয়ে মুখ ভেঙচি দেয়);(মেঘলা)
---আরোহী, চা খাবে....??(বিপ্লব)
--চা.....হুমমমম, খাওয়া যায়....!!(আরোহী
---চলো....!! ওখানে যাই।
.
তারপর চা খেতে খেতে বিপ্লব আরোহীর দিকে তাকিয়ে আছে। আরোহীর চোখ দু'টো অনেক সুন্দর!! ওর চোখের দিকে সারাক্ষণই তাকিয়ে থাকতে মন চায়। আড় চোখে আরোহীর চা খাওয়া দেখছে আর ভাবছে কিভাবে আরোহী বলা যায় ভালবাসার কথাটা..?? -কিভাবে যে বলি..?? বলেই কি দৌঁড়ে পালিয়ে যাব নাকি অন্যকিছু..?? মাথা কাজ করছেনা।
--কি ব্যাপার, তুমি চা খাবেনা..??(আরোহী)
---ও হ্যাঁ খাচ্ছিতো..!!(বিপ্লব)
--চা টা খুব গরম তাই না..??
---হুমমম। আচ্ছা আরোহী........
--কিছু বলবে..??
---না মানে হ্যাঁ....তোমার চোখগুলো দেখতে খুব সুন্দর!!
--এটাতো নতুন কিছুনা। প্রায়ই বলো...!!
---ও হ্যাঁ প্রায়ই বলি?
--ওকে আমার চা খাওয়া শেষ। আমাকে আজ বাসায় যেতে হবে। চলো উঠি....!!
---তোমাকে বাসায় যেতে হবে। হুমমমমমম, তোমাকে বাসায় যেতে হবে...!!
.
--এই যে উনি আসছেন...!! উনার মত ভীতু ছেলে আমি এই ক্যাম্পাসে দেখি নাই।। (মেঘলা)
---এই আমাকে ভীতু বলবিনা। কোন সমস্যা হলে তো আমাকেই সমাধান করতে হয়। তোরা থাকস সেসময়..?? স্যারকে দেখলেই তো দৌড় দেস। আবার আমাকে বলছে ভীতু..!! শুধু এক জায়গাতেই দূর্বল....!! আরোহীকে বলতে পারছিনা।(বিপ্লব)
--হুমমমমমম, সেজন্যই তো বলেছি তুই ভীতু। সবকিছু করতে পারিস মেয়েদের সামনে গিয়ে এমন চোপসে যাস কেন...??(মেঘলা)
---সব মেয়ে পেলি কোথায়..?? এই একটা মেয়ের সামনে গেলেই তো...হয়ে যায়। আমি কি করবো?? (বিপ্লব)
--আচ্ছা, ধর আমি তোর আরোহী। আমাকে প্রপোজ কর...!!(মেঘলা)
---আরে দুর....তুই আরোহী হবি কেন..??
--আরে বাবা, প্র্যাকটিস কর...!! সাহস হবে।
---তোকে বলব..?? আচ্ছা ঠিক আছে তুই আরোহী। মানে তুমি আরোহী। আমি এখন আরোহীর সামনে দাড়িয়ে আছি। আরোহী শুনো...!!
--হুমমম, বলো..!!
---আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি....!! সত্যিই অনেক ভালোবাসি।
--সাবাস, সাবাস। এইতো হলো। তাহলে কালকে ঠিক ওকে বলে দিবি!!
---আমি না মানে ওকে দেখলেই মনে কেমন জানি ধুক ধুক শুরু হয়ে যায়। হার্টবিটের কম্পন বেড়ে যায়, তোতলামি করিনা কিন্তু ওর সামনে শুরু করে দিই। শালা আমার সাথে কেন যে এমন হয়...?? যখনি ওকে এই কথাটা বলতে যাবো তখনি মুখ থেকে কথা বেরুতে চায় না....!! কথা আটকে যায়। আর উল্টা-পাল্টা বলে ফেলি।
--দোস্ত, তুই ওকে বলেই দেখ না.....সব ঠিক হয়ে যাবে। আমার মনে হয় হয় আরোহীও তোকে ভালোবাসে..!!
---তুই সত্যি বলছিস তো..?? কালকেই আমি ওকে বলে দিব। দেখিস কালকেই ওকে বলে দিব। তুই মনে রাখিস কিন্তু।। এখন যাই......!!
.
দুর......গাঁধা কোথাকার?? আজকেও বলতে পারলো না। কেন যে এই গাঁধাটাকে ভালোবেসে ফেলেছি। গাঁধা একটা, আস্তো একটা গাঁধা। ক্যাম্পাসে সারাদিন চিল্লাচিল্লা করে বেড়ায় আর আমার সামনে আসলেই তোতলামি শুরু করে দেয়।। এই নিয়ে ৪৩ বার বলতে যেয়েও বললো না। না এই গাঁধাকে দিয়ে হবেনা....?? - পড়ার টেবিলে বসে ডায়েরীতে লিখছে আর আজেবাজে বকছে আরোহী।
আরোহীও বিপ্লবকে অনেক ভালোবাসে। কিন্তু সে চায় এই গাঁধাটার মুখ থেকেই ভালবাসার কথাটা শুনতে। তাই যখনই বিপ্লব তাকে ডাক দেয় বা কোথাও যেতে বললে সে না বলে না।
এই মূহুর্তে ফোনের রিংটোন টা বেজে ওঠলো....
--হ্যালো মেঘলা বল...!!(আরোহী)
--কিরে কি করছিস.?(মেঘলা)
--আর বলিসনা এই নিয়ে ৪৩ বার হলো গাঁধাটা আজকেও কিছু বললো না। মন চাচ্ছে একটা থাপ্পর দিয়ে আসি।
--আচ্ছা, তুই তো জানিস যে ও পারেনা, তোর সামনে এলে কেমন জানি হয়ে যায়। সারাক্ষণই ক্যা ক্যা করবে। কিন্তু তোর সামনে গেলেই মুখে সুপারগ্লো লাগিয়ে রাখে। তুই ওকে বলে দে না...?? তুইও তো ওকে ভালোবাসিস...!!
--আরে দুর.....আমি ওর মুখ থেকেই শুনতে চাই। ও যতদিন পর্যন্ত না বলবে আমিও বলবো না।
--তাইলে, এ জন্মে তোদের আর প্রেম হবেনা। আমি রাখি এখন, দোস্ত.......!!
.
ঠিক একমাস পর ক্যাম্পাসে........
--মেঘলা শোন......!!(আরোহী)
--হ্যাঁ বল, কি হয়েছে?? (মেঘলা)
--বিপ্লবকে দেখছিস...??
--গাঁধাটা তো এখানেই ছিল...!! আছে ওদিকে মনে হয়।
--আচ্ছা শোন, তোকেই বলি।
--কি হয়েছে তোর..?? এমন লাগছে কেন তোকে??
--আগামী ২৭ তারিখ বাবা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। আমাকে কিছু জানায়নি। হঠাৎ করেই বলে আগামী ২৭ তারিখ তোর বিয়ে আর প্রিপারেশন থাকতে বলে।
--কি বলিস তুই..?? বিপ্লব এটা শুনলে তো মারাই যাবে। আচ্ছা, ছেলেটা কে?
--আরে আমি জানি নাকি..?? দেখেছিও না। বাবা হুট করে সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে আছে। বিয়ে নাকি সেই ছেলেকেই করতে হবে। প্লিজ তুই বিপ্লবকে বল কিছু একটা করতে..!! আমি এ বিয়ে করতে পারবো না। প্লিজ মেঘলা, তুই বিপ্লবকে একটু বুঝিয়ে বলিস কিছু একটা করতে। (কাঁদো কাঁদো গলায় কেঁদেই দিল আরোহী)
--আচ্ছা ঠিক আছে, ঠিক আছে আমি ওরে বলতাছি...!! ওই গাঁধার বাচ্চার জন্যই আজ এই অবস্থা..!! আজ ওর একদিন কি আমার একদিন।।
.
মেঘলা সারা ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে গাঁধাটাকে খুঁজতে। হঠাৎ, ওমা উনি রেললাইনে বসে খুব মজা করছেন..!! রাখ তোর মজা আমি দেখাচ্ছি।।
মেঘলা পিছন থেকে বিপ্লবের কলারটা ধরে টেনে নিয়ে আসলো...!! কি সাংঘাতিক মেয়ে রে বাপরে বাপ....!!
---আরে...তুই আমার সাথে এমন করছিস কেন..?? লোকজন দেখে কি বলছে?? (বিপ্লব)
--লোকে যাই বলুক...এদিকে একটা মেয়ের জীবন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে আর উনি এখানে বসে বন্ধুদের সাথে মজা করছে।(মেঘলা)
---আচ্ছা, কলারটা ছাড়ড়ড়ড়ড়ড়ড়!! এবার বল কি হয়েছে..??
--কি হবে আবার..?? বিয়ের দাওয়াত খেতে হবে।
---বিয়ের দাওয়াত..!! তো কি সমস্যা..?? খেয়ে আসবো চল..!!
--আজ না। আগামী ২৭ তারিখ।
---ও তাহলে এখন এমন করছিস কে..?? আরো ৭ দিন আছে, পরে প্ল্যান করা যাবে কি করবো..!!
--তোকে না মন চাচ্ছে আচ্ছামত দিতে..!! কার বিয়ে জানিস..??
---কই নাতো..!! কার বিয়ে..??
--আরোহীর বিয়ে। উনার বাবা একটা ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করেছে। এখন তুই বুঝ দাওয়াত খাবি না কিছু করবি..??
খানিক্ষণের মধ্যেই বিপ্লবের মুখটা চোপসে গেল! মনটা একেবারে দূর্বল হয়ে পড়লো। না জানি কি হারিয়ে যাচ্ছে...!!
--কি তুই কি এখনো বলতে পারবি না আরোহীকে যে তুই তাকে ভালোবাসিস..?? আরে গাঁধা সেও তো তোকে ভালোবাসে।
---(ভাঙা গলায়) কিন্তু ওর তো এখন বিয়ে ঠিক। আমি কি করবো..!!
--তোর মাথা....!! আমি কিছু জানিনা। যা করার তুইইই করবি।
একথাটা বলেই মেঘলা দ্রুত চলে গেল। আর বিপ্লব রাস্তার পাশে অল্প অল্প করে হাটছে আর ভাবছে বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। এখন কি ওকে এসব বলা ঠিক হবে..?? ওর বাবাকে কি করে বলবো..?? ওহ নো.....!! বলতে চেয়েও বলা হলো না..!!
.
আজ আরোহীর গায়ে হলুদ। বিপ্লবকেও সেদিনের পর থেকে আর দেখা যাচ্ছেনা। ফোনটাও বন্ধ করে রেখেছে। মেঘলা বিপ্লবকে অনেকবার ফোনে ট্রাই করেছে। না খেয়ে বিপ্লবের চেহারাটাও শুকিয়ে গেছে।
.
এখন রাত ঠিক ১১টা বাজে.....!!
হঠাৎ মেঘলা বিপ্লবের রুমে চলে আসলো। দেখে বিপ্লব এলোমেলো ভাবে শুয়ে আছে।
--এই গাঁধা, উঠ......উঠ.......!! (মেঘলা)
---তুই..?? এত রাতে এখানে কিভাবে..??(বিপ্
লব)
--কোন কথা বলবি না...!! সোজা আমার সাথে নিচে যাবি। চল....!!
নিচে নামতেই দেখে আরোহী। অবাক করা কান্ড এত রাতে এই দু'টো মেয়ে আমার বাসায়...!! পপপরীটরী নাতো....??
বিপ্লবকে দেখেই আরোহী দৌঁড়ে তার কাছে চলে আসলো....
--বিপ্লব, কাল আমার বিয়ে..!! আমি এ বিয়ে করতে পারবো না। প্লিজ তুমি কিছু একটা করো..!! (এই কথাগুলো কান্না করেই বললো আরোহী)
---আরে কান্না করছো কেন...?? কি করবো..??
--প্লিজ কিছু একটা করো..!!
--- কি করবো..?? (মাথায় হাত দিয়ে চুল টানতে টানতে) তুমি আমাকে ভালোবাসো...?? আমি তোমাকে ভালোবাসি।।
--(কান্নায় বিজড়িত হয়) এই কথাটা বলতে তোমার এত দেরি হলো...!!
---কি করবো, সাহস হচ্ছিল না...!!
--এখন কি করে হলো..??
---আমি তোমাকে হারানোর যন্ত্রণাটা বুঝতে পারছিলাম। মনে অনেক শূন্যতা ফিল করছিলাম।
--(হাসি আর কান্নার মাঝামাঝি হয়ে বিপ্লবকে জড়িয়ে ধরলো) ....আমিও এই গাঁধাটাকে অনেক ভালোবাসি..!!
মেঘলা ওদের আবেগপূর্ণ দৃশ্য দেখে একটু লজ্জিত হলো আবার খুশিও হলো...!! যাক অবশেষে তাহলে ওদের প্রেমটা হলো। মানে বিয়েও হবে।। এখন দুই ছাগলটাকে জানাতে হবে।।
.
________লেখক: Swift Biplob (Messy Writer)
আজকেও লেইট।।
.
বিপ্লব আজকেও ঘুম থেকে দেরিতে উঠেছে। ভার্সিটির ক্লাস সকাল ৯টায়। আর সে উঠেছে ৯:১০ এ। এবার বুঝুক মজা...!! সে প্রতিদনই দেরিতে উঠে আর দেরিতে ক্লাসে যায়। প্রতিদিনই সে টিচার্সদের বকা খায়। হয় চোখ কচলাতে কচলাতে, নাহয় স্যার ঢুকবে ঢুকবে এই অবস্থা, আবার স্যার এই মাত্র ঢুকেছে ঠিক সেমসয়ই বিপ্লব ক্লাসে ঢুকে। কিন্তু আজতো কোনটাই হবেনা...!! টাইম ওভার হয়ে গেছে। তবুও সে তাড়াহুড়ো করে রেডি হয়।
---মা, তুমি আমাকে ডাক দেওনি কেন...??(বিপ্লব)
--এই একদম মিথ্যা কথা বলবিনা..!! সেই সকাল থেকে ডাকছি উঠার কোন নাম নেই। এখন আসছে আমাকে দোষ দিতে। (বিপ্লবের মা)
---তুমি আমাকে ডাক দিছো...??
--শুধু কি ডাকই দিছি, কান ধরে তোলতে চাইছিলাম। তুই শুধু বলিস আর একটু ঘুমাই, আর একটু ঘুমাই মা।। এখন হলো....!!
---কই তুমি আমারে ডাক দিছো....??
--এবার কিন্তু মার খাবি।
---আচ্ছা, আমি এখন যাই।
--আরে, নাস্তা খেয়ে যা। টেবিলে রাখা আছে।
---মা, এখন সময় নেই। পরে খাব....!!
--এই শোন, শোন, নাস্তাটা খেয়ে যা।..... যাক বাবা, চলেই গেল।। এই ছেলেকে নিয়ে আমি আর পারিনা।।
.
শত তাড়াহুড়ো করেও ক্যাম্পাসে আসতে আসতে ৯:৩০ বেজে গেল। ইসসসসসসস, আজকেও স্যারের বকা খেতে হবে। আর ইতর মেয়েগুলো দাঁত বের করে হাসবে। মনে হয় ওরা ক্লোজ-আপ পেষ্টের বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। ইচ্ছে করে সবগুলোকে ইচ্ছেমত দিই। স্বপ্নেই ওদেরকে মেরে ফেলি।
---কিরে বদমাইশের হাড্ডিরা, তোরা এখানে এভাবে বসে আছিস কেন....?? ক্লাস করবিনা...??(বিপ্লব)
--না করবো না। (তুহিন)
--তুই কি ক্লাস করতে এসেছিস....??(রোহান)
---তোদের কি মনে হয়..?? বসে থাকতে?? (বিপ্লব)
--আরে প্যাচাল বাদ দিয়া যা ক্লাসে যা ক্লাস করতে যা.....!! আমরা তো হুদায় এখানে বসে আছি তাই না..?? যাও সুবল স্যার ক্লাসে আছে, যাও তুমি ক্লাস করতে যাও (রঙিলা-ঢঙিলা মুখে): (মেঘলা)
---সুবল স্যার...!!(বিপ্লব)
--কি হয়েছে..?? এমন আতকে উঠলি কেন..?? যা ক্লাসে যা...!!(রোহান)
---(একটু ভয়ে ভয়ে ভীতু গলায়) তোরা কি গেছিলি ক্লাসে....??(বিপ্লব)
--আরে বেটা মাত্র পাঁচ মিনিট লেইট হইছিল। সুবল স্যার মহাজ্ঞানী, আমাদের টাইম সম্পর্কে পাঁচ মিনিট ক্লাস নিয়ে চলে যেতে বললেন। আর উনি এসেছেন আধাঘন্টা লেইটে। যান যান আপনি ক্লাসে যান.....!!(তুহিন)
---দোস্ত, তোরা এমন করছিস কেন...?? আমরা আমরাই তো...!!(বিপ্লব)
--তাইলে আবার ভাব লস কে...??(মেঘলা)
---কই ভাব লইলাম...?? এমন করস কে তোরা..??(বিপ্লব)
--হইছে, হইছে আর বুঝাইতে হবেনা...!!(রোহা
ন)
--এখন আর মাত্র ১৫ মিনিট অপেক্ষা কর তোরা। সুবল স্যারের ক্লাসটা শেষ হলেই আমরা ক্লাসে ঢুকে পড়বো। (মেঘলা)
---হুমমমমমমম, এখনতো এটাই করতে হবে।।(বিপ্লব)
.
১৫ মিনিট পর.....
---দোস্ত ক্লাস শেষ...চল ঢুকে পড়ি!!(বিপ্লব)
--এই দাঁড়া, দাঁড়া, দেখ সবাই বের হয়ে যাচ্ছে। কি ব্যাপার..?? (মেঘলা)
--ও তাইতো...!!(বিপ্লব)
--কিছু একটা হইছেতো...??(রোহান)
--দোস্ত......??(মেঘলা)
---কি...?? (বিপ্লব)
--দোস্ত.....??(মেঘলা)
---আরে কি.... বলনা..!!(বিপ্লব)
--দেখ, কে আসছে...!!(মেঘলা)
---কে আসছে..??(বিপ্লব)
--দেখ, কে আসছে..?? তোর জান আরোহী আসছে....!!(মেঘলা)
---জান আরোহী আসছে তো কি হইছে...??(বিপ্লব)
--আরে তোর আরোহী আসছে.....(মেঘলা)
---আমার আরোহী.....ও আরোহী আসছে.....!! কোথায় আরোহী....?? কোথায়..??(বিপ্লব)
--এই যে এদিকেই আসছে..!!(মেঘলা)
---ও এদিকেই আসছে.... কিছু বলবে মনে হয়....হিহিহিহিহি!!! আরোহী আসছে। (বিপ্লব)
--দাঁত বন্ধ কর....!!(মেঘলা)
--হাই মেঘলা, কোথায় ছিলি এতক্ষণ...?? (আরোহী)
--এখানেই বসে ছিলাম। দেখিস না পাঁচ মিনিট দেরিতে আসছি বলে স্যার ক্লাস করতে দিল না...!!(মেঘলা)
--হুমমমম, দেখেছিই তো।। হাই বিপ্লব, কেমন আছো...??(আরোহী)
---ওহ হ্যাঁ তুমি, আরোহী...হাই...কেমন আছো....?? (বিপ্লব)
--হুমমমম, ভালো। তুমিও আজ লেইট....??(আরোহী)
---না মানে হ্যাঁ মানে না......হুমমমমমম লেইট।।(বিপ্লব)
--আরে আমরা তো মাত্র পাঁচ মিনিট লেইট। আর ওর তো পুরো আধাঘন্টা লেইট।।(মেঘলা)
--হিহিহিহিহি......!! তুমি প্রতিদিনই লেইট করো....!! সকালে উঠতে পারোনা...??(আরো
হী)
---হ্যাঁ.... না। এই বদমাইশগুলো একটাও আমারে ফোন দেয়না। ওরা নিজেরা নিজেরাই ক্যাম্পাসে চলে আসে। আমাকে একবারও বলেনা...!! খুব খারাপ..!!(বিপ্লব)
--ও তাই....?? তাহলে তোমার নাম্বারটা আমাকে দিও....আমি সকালে ফোন দিয়ে তোলে দিব।।(আরোহী)
---০১৬****..............(বিপ্লব)
--আরে এখন না। রাতে ফেবুতে দিও...!!(আরোহী)
--এই আরোহী, সবাই চলে এসেছে কেন..?? আর ক্লাস হবেনা?? (মেঘলা)
--না রে, আজ নাকি টিচার্সদের মিটিং আছে। তাই একটা ক্লাস শেষ করেই বিদায় দিয়ে দিল।(আরোহী)
--ও এই কথা।।(মেঘলা)
---তাইলে তো আজকে আর ঝামেলা নাই। শুধু শুধু ঘুম থেকে উঠে ক্যাম্পাসে আসলাম। টিচার্সদের মিটিং আছে আগে বললেই....... (বিপ্লব)
--এই তোর কি ক্লাস করতে ভালো লাগেনা..??(মেঘলা)
---লাগে, কিন্তু সবসময় না।। (বিপ্লব)
--হিহিহিহিহি......!! (আরোহী)
.
---আরোহী শুনো, একটা কথা...!(বিপ্লব)
মেঘলা খুব মনযোগ দিয়ে বিপ্লবের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আজ বলেই দিবে। ইসসসসসসস, বলে দে ছাগল। এক্ষুণি বলে দে তুই আরোহীকে ভালোবাসিস..!! কাম অন বিপ্লব....কাম অন। -মনে মনে মেঘলার প্রার্থনা।
--হুমমম, বলো...!!(আরোহী)
---না মানে.....??
--(বলে দে ছাগল কোথাকার.....ভয় পাস না!! বলে দে.......) (মেঘলা)
---না মানে, আজ কি পড়াইছে স্যার.....??)(ব
িপ্লব)
(দুর...গাঁধা কোথাকার....?? মন চাচ্ছে এখনি দু'গালে কষিয়ে থাপ্পর দিতে। এতদিন হয়ে গেল এখনো আরোহীকে ওর মনের কথাটা বলতে পারছেনা।-মেঘলা)
--আমি যাই....রে। দেখি ঐ দুই ছাগল কোথায় গেছে...?? হুট করে কোথায় হারিয়ে যায় যে খুঁজে পাওয়া যায় না...!! (আর যাওয়ার সময় বিপ্লবের দিকে তাকিয়ে মুখ ভেঙচি দেয়);(মেঘলা)
---আরোহী, চা খাবে....??(বিপ্লব)
--চা.....হুমমমম, খাওয়া যায়....!!(আরোহী
---চলো....!! ওখানে যাই।
.
তারপর চা খেতে খেতে বিপ্লব আরোহীর দিকে তাকিয়ে আছে। আরোহীর চোখ দু'টো অনেক সুন্দর!! ওর চোখের দিকে সারাক্ষণই তাকিয়ে থাকতে মন চায়। আড় চোখে আরোহীর চা খাওয়া দেখছে আর ভাবছে কিভাবে আরোহী বলা যায় ভালবাসার কথাটা..?? -কিভাবে যে বলি..?? বলেই কি দৌঁড়ে পালিয়ে যাব নাকি অন্যকিছু..?? মাথা কাজ করছেনা।
--কি ব্যাপার, তুমি চা খাবেনা..??(আরোহী)
---ও হ্যাঁ খাচ্ছিতো..!!(বিপ্লব)
--চা টা খুব গরম তাই না..??
---হুমমম। আচ্ছা আরোহী........
--কিছু বলবে..??
---না মানে হ্যাঁ....তোমার চোখগুলো দেখতে খুব সুন্দর!!
--এটাতো নতুন কিছুনা। প্রায়ই বলো...!!
---ও হ্যাঁ প্রায়ই বলি?
--ওকে আমার চা খাওয়া শেষ। আমাকে আজ বাসায় যেতে হবে। চলো উঠি....!!
---তোমাকে বাসায় যেতে হবে। হুমমমমমম, তোমাকে বাসায় যেতে হবে...!!
.
--এই যে উনি আসছেন...!! উনার মত ভীতু ছেলে আমি এই ক্যাম্পাসে দেখি নাই।। (মেঘলা)
---এই আমাকে ভীতু বলবিনা। কোন সমস্যা হলে তো আমাকেই সমাধান করতে হয়। তোরা থাকস সেসময়..?? স্যারকে দেখলেই তো দৌড় দেস। আবার আমাকে বলছে ভীতু..!! শুধু এক জায়গাতেই দূর্বল....!! আরোহীকে বলতে পারছিনা।(বিপ্লব)
--হুমমমমমম, সেজন্যই তো বলেছি তুই ভীতু। সবকিছু করতে পারিস মেয়েদের সামনে গিয়ে এমন চোপসে যাস কেন...??(মেঘলা)
---সব মেয়ে পেলি কোথায়..?? এই একটা মেয়ের সামনে গেলেই তো...হয়ে যায়। আমি কি করবো?? (বিপ্লব)
--আচ্ছা, ধর আমি তোর আরোহী। আমাকে প্রপোজ কর...!!(মেঘলা)
---আরে দুর....তুই আরোহী হবি কেন..??
--আরে বাবা, প্র্যাকটিস কর...!! সাহস হবে।
---তোকে বলব..?? আচ্ছা ঠিক আছে তুই আরোহী। মানে তুমি আরোহী। আমি এখন আরোহীর সামনে দাড়িয়ে আছি। আরোহী শুনো...!!
--হুমমম, বলো..!!
---আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি....!! সত্যিই অনেক ভালোবাসি।
--সাবাস, সাবাস। এইতো হলো। তাহলে কালকে ঠিক ওকে বলে দিবি!!
---আমি না মানে ওকে দেখলেই মনে কেমন জানি ধুক ধুক শুরু হয়ে যায়। হার্টবিটের কম্পন বেড়ে যায়, তোতলামি করিনা কিন্তু ওর সামনে শুরু করে দিই। শালা আমার সাথে কেন যে এমন হয়...?? যখনি ওকে এই কথাটা বলতে যাবো তখনি মুখ থেকে কথা বেরুতে চায় না....!! কথা আটকে যায়। আর উল্টা-পাল্টা বলে ফেলি।
--দোস্ত, তুই ওকে বলেই দেখ না.....সব ঠিক হয়ে যাবে। আমার মনে হয় হয় আরোহীও তোকে ভালোবাসে..!!
---তুই সত্যি বলছিস তো..?? কালকেই আমি ওকে বলে দিব। দেখিস কালকেই ওকে বলে দিব। তুই মনে রাখিস কিন্তু।। এখন যাই......!!
.
দুর......গাঁধা কোথাকার?? আজকেও বলতে পারলো না। কেন যে এই গাঁধাটাকে ভালোবেসে ফেলেছি। গাঁধা একটা, আস্তো একটা গাঁধা। ক্যাম্পাসে সারাদিন চিল্লাচিল্লা করে বেড়ায় আর আমার সামনে আসলেই তোতলামি শুরু করে দেয়।। এই নিয়ে ৪৩ বার বলতে যেয়েও বললো না। না এই গাঁধাকে দিয়ে হবেনা....?? - পড়ার টেবিলে বসে ডায়েরীতে লিখছে আর আজেবাজে বকছে আরোহী।
আরোহীও বিপ্লবকে অনেক ভালোবাসে। কিন্তু সে চায় এই গাঁধাটার মুখ থেকেই ভালবাসার কথাটা শুনতে। তাই যখনই বিপ্লব তাকে ডাক দেয় বা কোথাও যেতে বললে সে না বলে না।
এই মূহুর্তে ফোনের রিংটোন টা বেজে ওঠলো....
--হ্যালো মেঘলা বল...!!(আরোহী)
--কিরে কি করছিস.?(মেঘলা)
--আর বলিসনা এই নিয়ে ৪৩ বার হলো গাঁধাটা আজকেও কিছু বললো না। মন চাচ্ছে একটা থাপ্পর দিয়ে আসি।
--আচ্ছা, তুই তো জানিস যে ও পারেনা, তোর সামনে এলে কেমন জানি হয়ে যায়। সারাক্ষণই ক্যা ক্যা করবে। কিন্তু তোর সামনে গেলেই মুখে সুপারগ্লো লাগিয়ে রাখে। তুই ওকে বলে দে না...?? তুইও তো ওকে ভালোবাসিস...!!
--আরে দুর.....আমি ওর মুখ থেকেই শুনতে চাই। ও যতদিন পর্যন্ত না বলবে আমিও বলবো না।
--তাইলে, এ জন্মে তোদের আর প্রেম হবেনা। আমি রাখি এখন, দোস্ত.......!!
.
ঠিক একমাস পর ক্যাম্পাসে........
--মেঘলা শোন......!!(আরোহী)
--হ্যাঁ বল, কি হয়েছে?? (মেঘলা)
--বিপ্লবকে দেখছিস...??
--গাঁধাটা তো এখানেই ছিল...!! আছে ওদিকে মনে হয়।
--আচ্ছা শোন, তোকেই বলি।
--কি হয়েছে তোর..?? এমন লাগছে কেন তোকে??
--আগামী ২৭ তারিখ বাবা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। আমাকে কিছু জানায়নি। হঠাৎ করেই বলে আগামী ২৭ তারিখ তোর বিয়ে আর প্রিপারেশন থাকতে বলে।
--কি বলিস তুই..?? বিপ্লব এটা শুনলে তো মারাই যাবে। আচ্ছা, ছেলেটা কে?
--আরে আমি জানি নাকি..?? দেখেছিও না। বাবা হুট করে সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে আছে। বিয়ে নাকি সেই ছেলেকেই করতে হবে। প্লিজ তুই বিপ্লবকে বল কিছু একটা করতে..!! আমি এ বিয়ে করতে পারবো না। প্লিজ মেঘলা, তুই বিপ্লবকে একটু বুঝিয়ে বলিস কিছু একটা করতে। (কাঁদো কাঁদো গলায় কেঁদেই দিল আরোহী)
--আচ্ছা ঠিক আছে, ঠিক আছে আমি ওরে বলতাছি...!! ওই গাঁধার বাচ্চার জন্যই আজ এই অবস্থা..!! আজ ওর একদিন কি আমার একদিন।।
.
মেঘলা সারা ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে গাঁধাটাকে খুঁজতে। হঠাৎ, ওমা উনি রেললাইনে বসে খুব মজা করছেন..!! রাখ তোর মজা আমি দেখাচ্ছি।।
মেঘলা পিছন থেকে বিপ্লবের কলারটা ধরে টেনে নিয়ে আসলো...!! কি সাংঘাতিক মেয়ে রে বাপরে বাপ....!!
---আরে...তুই আমার সাথে এমন করছিস কেন..?? লোকজন দেখে কি বলছে?? (বিপ্লব)
--লোকে যাই বলুক...এদিকে একটা মেয়ের জীবন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে আর উনি এখানে বসে বন্ধুদের সাথে মজা করছে।(মেঘলা)
---আচ্ছা, কলারটা ছাড়ড়ড়ড়ড়ড়ড়!! এবার বল কি হয়েছে..??
--কি হবে আবার..?? বিয়ের দাওয়াত খেতে হবে।
---বিয়ের দাওয়াত..!! তো কি সমস্যা..?? খেয়ে আসবো চল..!!
--আজ না। আগামী ২৭ তারিখ।
---ও তাহলে এখন এমন করছিস কে..?? আরো ৭ দিন আছে, পরে প্ল্যান করা যাবে কি করবো..!!
--তোকে না মন চাচ্ছে আচ্ছামত দিতে..!! কার বিয়ে জানিস..??
---কই নাতো..!! কার বিয়ে..??
--আরোহীর বিয়ে। উনার বাবা একটা ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করেছে। এখন তুই বুঝ দাওয়াত খাবি না কিছু করবি..??
খানিক্ষণের মধ্যেই বিপ্লবের মুখটা চোপসে গেল! মনটা একেবারে দূর্বল হয়ে পড়লো। না জানি কি হারিয়ে যাচ্ছে...!!
--কি তুই কি এখনো বলতে পারবি না আরোহীকে যে তুই তাকে ভালোবাসিস..?? আরে গাঁধা সেও তো তোকে ভালোবাসে।
---(ভাঙা গলায়) কিন্তু ওর তো এখন বিয়ে ঠিক। আমি কি করবো..!!
--তোর মাথা....!! আমি কিছু জানিনা। যা করার তুইইই করবি।
একথাটা বলেই মেঘলা দ্রুত চলে গেল। আর বিপ্লব রাস্তার পাশে অল্প অল্প করে হাটছে আর ভাবছে বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। এখন কি ওকে এসব বলা ঠিক হবে..?? ওর বাবাকে কি করে বলবো..?? ওহ নো.....!! বলতে চেয়েও বলা হলো না..!!
.
আজ আরোহীর গায়ে হলুদ। বিপ্লবকেও সেদিনের পর থেকে আর দেখা যাচ্ছেনা। ফোনটাও বন্ধ করে রেখেছে। মেঘলা বিপ্লবকে অনেকবার ফোনে ট্রাই করেছে। না খেয়ে বিপ্লবের চেহারাটাও শুকিয়ে গেছে।
.
এখন রাত ঠিক ১১টা বাজে.....!!
হঠাৎ মেঘলা বিপ্লবের রুমে চলে আসলো। দেখে বিপ্লব এলোমেলো ভাবে শুয়ে আছে।
--এই গাঁধা, উঠ......উঠ.......!! (মেঘলা)
---তুই..?? এত রাতে এখানে কিভাবে..??(বিপ্
লব)
--কোন কথা বলবি না...!! সোজা আমার সাথে নিচে যাবি। চল....!!
নিচে নামতেই দেখে আরোহী। অবাক করা কান্ড এত রাতে এই দু'টো মেয়ে আমার বাসায়...!! পপপরীটরী নাতো....??
বিপ্লবকে দেখেই আরোহী দৌঁড়ে তার কাছে চলে আসলো....
--বিপ্লব, কাল আমার বিয়ে..!! আমি এ বিয়ে করতে পারবো না। প্লিজ তুমি কিছু একটা করো..!! (এই কথাগুলো কান্না করেই বললো আরোহী)
---আরে কান্না করছো কেন...?? কি করবো..??
--প্লিজ কিছু একটা করো..!!
--- কি করবো..?? (মাথায় হাত দিয়ে চুল টানতে টানতে) তুমি আমাকে ভালোবাসো...?? আমি তোমাকে ভালোবাসি।।
--(কান্নায় বিজড়িত হয়) এই কথাটা বলতে তোমার এত দেরি হলো...!!
---কি করবো, সাহস হচ্ছিল না...!!
--এখন কি করে হলো..??
---আমি তোমাকে হারানোর যন্ত্রণাটা বুঝতে পারছিলাম। মনে অনেক শূন্যতা ফিল করছিলাম।
--(হাসি আর কান্নার মাঝামাঝি হয়ে বিপ্লবকে জড়িয়ে ধরলো) ....আমিও এই গাঁধাটাকে অনেক ভালোবাসি..!!
মেঘলা ওদের আবেগপূর্ণ দৃশ্য দেখে একটু লজ্জিত হলো আবার খুশিও হলো...!! যাক অবশেষে তাহলে ওদের প্রেমটা হলো। মানে বিয়েও হবে।। এখন দুই ছাগলটাকে জানাতে হবে।।
.
________লেখক: Swift Biplob (Messy Writer)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন