সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

'নিলা আপু'


.
মনের সমস্ত সাহস একত্রিত করে নীলা আপুকে বললাম,
-আপু, আই লাভ ইউ। প্রথম দিন যেদিন তোমাকে দেখেছিলাম সেদিনই তোমার প্রেমে পড়ে যাই। আপু আমি তোমাকে সত্যিই অনেক ভালোবাসি।
আমার কথা শুনে তেমন কোন রিয়্যাকশন না করে নিজের স্বভাবের বিরুদ্ধে গিয়ে খুব শান্ত আর স্বাভাবিক গলায় নীলা আপু বলল,
-এটা ভালোবাসা নয় রে পাগল। এটা আবেগ। মাথা থেকে এসব ঝেড়ে ফেলে ভালোভাবে পড়ালেখা কর, আমার চেয়ে অনেক সুন্দরী এবং ভালো মেয়ে পাবি।
এই বলে নীলা আপু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বিজয়ীর একটা হাসি দিয়ে চলে গেল
আর আমি?
আমি যতটা না কষ্ট পেলাম তার চেয়ে বেশি অবাক হলাম। এ কেমন ছ্যাঁকা?
আমি ভাবছিলাম হয়তো দুই-একটা চড় থাপ্পড় মারবে, না হয় আমার প্রস্তাব মেনে নেবে। কিন্তু একি? আমারে পুরাই বলদ বানিয়ে চলে গেল নীলা আপু। আর আমি নীল দিগন্তের দিকে হা করে তাকিয়ে রইলাম।
নীলা আপুদের গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর কোন এক এলাকায়। নীলা আপুর বাবা সরকারি একটা কলেজের শিক্ষক। রাজশাহী থেকে পাবনা বদলি হওয়ায় উনারা এখানে আসেন এবং আমাদের বাসার উপরের তালা ভাড়া নেয়।
প্রথম যেদিন নীলা আপুকে দেখেছিলাম তখন মনে হয় নি উনি আমার চেয়ে বড় হবেন। তবে প্রথমবার দেখেই নীলা আপুকে ভীষণভাবে মনে ধরে যায়।
তারপর যখন আম্মার কাছে থেকে শুনলাম যে ওরা আমাদের বাসার নতুন ভাড়াটিয়া, তখন মনে মনে আল্লাহ তা'য়ালার অনেক শুকরিয়া আদায় করছিলাম। তারপরে যখন পরিচিত হয়ে জানতে পারি উনি আমার চেয়ে ৩ বছরের সিনিয়র তখন হালকা এতটা সকড্ খাই। কেমনে সম্ভব?
মেয়েটার চেহারা এত্তো ইনোসেন্ট যে, কেউ বুঝতে পারবে না এই মেয়ে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে।
জানতাম নীলা আপু বয়সে আমার চেয়ে বড়। তারপরও মনে হইছিল উনি হয়তো সম্মানে আমার চেয়ে বড়, বয়সে হয়তো সমবয়সীই হবে।
তাই সব সময় তার পেছনে লেগে থাকতাম। ভাবছিলাম শচীন টেন্ডুলকার বা জেরার্ড পিকের মতো আমিও আমার স্বপ্নের রাজকণ্যাকে নিজের করে পাব। কিন্তু কোথায় কি? আমারে গ্রেট একটা ছ্যাঁকা দিয়ে নীলা আপু চলে গেল।
তবে নীলা আপু খুব মিশুক প্রকৃতির মেয়ে। খুব সহজেই সবাইকে আপন করে নেয়। তাদের পরিবারের সবাই মানুষের সাথে মিশতে পছন্দ করে। কয়েক দিনের মধ্যেই আমাদের পরিবারের সাথে তাদের পরিবারের খুব মিল-মোহাব্বত হয়ে গিয়েছিল। নীলা আপু প্রায়ই আমাদের বাড়িতে আসে। মায়ের সাথে গল্প করে, মায়ের মাথায় তেল দিয়ে দেয়, আরো অনেক কিছু করে।
প্রথম কয়েকদিন আমার সাথে তেমন কথা বার্তা না বললেও আস্তে আস্তে আমার সাথেও ফ্রি হয়ে যায়। প্রথমে আমাকে তুমি করেই বলত। তখন আপুর মুখ থেকে তুমি ডাকটা শুনতে খুব রোমান্টিক লাগত। আমি তো মনের আকাশে উড়তাম। তারপর আস্তে আস্তে তুই করে ডাকা শুরু করে। আমি প্রথম প্রথম আপনি করে ডাকতাম, আর এখন তুমি করেই ডাকি।
নীলা আপুর বাবা একটা কলেজের শিক্ষক হওয়ার পরও কেন জানিনা নীলা আপু আমাদের কলেজেই ভর্তি হয়। প্রথম কয়েক দিন আঙ্কেল আপুকে কলেজে রেখে আসতেন আবার কলেজ থেকে নিয়ে আসতেন।
তারপরে যখন জানতে পারে আমিও ওই কলেজেই পড়ি তখন থেকে আমার সাথেই যায়।
এসএসসি পর্যন্ত সাইন্স নিয়ে পড়লেও পরে ইন্টারে এসে আর্স নিছি। কারণটা একমাত্র রসায়ন। রসায়নের কোন বিক্রিয়াই আমার মাথায় সাপোর্ট করত না। তাই বাধ্য হয়ে আর্সে পাড় হই।
শুনেছি নীলা আপু নাকি আমার চেয়েও গর্ধব ছিলেন। এসএসসিতেও আর্স, ইন্টারেও আর্স আর এখন অনার্সও করতিছে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে।
নীলা আপুর বাবা যেহেতু একটা কলেজে শিক্ষকতা করেন তাই বিকেলবেলা উনার কাছে প্রায়ভেট পড়তে যেতে হয়।
প্রায়ভেট পড়তে অবশ্য আমার বোরিং লাগে না কারণ আমার সাথে উনি নীলা আপুকেও পড়ান।
নীলা আপু আমার চেয়েও বড় ফাঁকিবাজ। একটু সুযোগ পেলেই এ গল্প, সে গল্প নিয়ে মেতে উঠেন। কোন বান্ধবিকে সাথে নিয়ে কি চুরি করে খেয়েছে, কার বারটা বাজিয়েছে, কোন স্যারকে কিভাবে বোকা বানিয়েছে, এসব গল্প করতো সব সময়। খুবই প্রাণ-চঞ্চল মেয়ে। গল্প শোনার ছলে আমি মুগ্ধ হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকতাম। কথা বলতে বলতে যখন ঠোঁটগুলো এদিকে ওদিক বাঁকাত তখন আমি তার ওই গোলাপি ঠোঁটের ভেতর হারিয়ে যেতাম।
ওই দিন নীলা আপুকে প্রস্তাব দেওয়ার পর ১ দিন তার সাথে দেখাও করি নি, কলেজেও যাইনি, প্রায়ভেটেও যাই নি।কারণ দিনটা ছিল শুক্রবার।
পরের দিন কলেজে যাওয়ার জন্য রাস্তায় দাড়িয়ে আছি পেছন থেকে নীলা আপু ডেকে বলল,
-কিরে কাল সারাদিন কই ছিলি? আর আজ আসার সময় আমায় ডাকিস নি কেন?
-ওহ সরি ভূলে গেছিলাম। আর কাল আমার এক বন্ধুর মোসলমানি খাইতে গেছিলাম তাই তোমার সাথে সারাদিন দেখা হয় নি।
-থাপ্পড় খাবি একটা, বেয়াদব কোথাকার। চল রিক্সায় ওঠ।
-আরে আপু এত চেত কেন? এমনি একটু মজা করলাম আরকি।
-চুপ একদম চুপ।
দুজন দুজনার সাথে এমনভাবে আচরণ করলাম যেন আমাদের মাঝে কিছুই হয় নি।
নীলা আপুর সাথে যতক্ষণ থাকি কতক্ষণ কিছুই মনে হয় না। কিন্তু যখনই একা হই তখন কেমন যেন খালি খালি লাগে। মাঝে মাঝে আবার নিজের ভেতর অপরাধ বোধও কাজ করে। নীলা আপুর সামনে আগের মতো আর ফ্রি হতে পারি না। নীলা আপুও কেমন জানি মনোযোগী ছাত্রীর মতো বইয়ের ভেতর মুখ ডুবিয়ে চুপচাপ বসে থাকে।
কিছুই ভালো লাগছে না।
সন্ধ্যায় ছাদে গিয়ে এক সাইটে বসে প্লে লিষ্টে জ্যাক নাইটের মেডলি পার্ট-৩ গানটা লাগিয়ে দিয়ে ব্যস্ত মানুষের যাওয়া আসা দেখছি। কিছুক্ষণ পর দেখি নীলা আপুও কানে হেডফোন লাগিয়ে ছাদে উঠল। আমাকে বসে থাকা দেখে উনিও আমার পাশে এসে বসল।
কারো মুখে কোন শব্দ নেই। শব্দ বলতে জ্যাক নাইটের সুরটাই খালি বাজছে। বাজতে বাজতে সেও এক সময় থেমে গেল। আরো কিছুক্ষণ সময় যাওয়ার পর নীলা আপু বলল,
-আচ্ছা ইমরান, কোন কারণে কি তোর মন খারাপ?
প্রশ্নটা শুনে আমার মন খারাপের মাত্রাটা আরো বেড়ে গেল কিন্ত তারপরও হাসি মুখে বললাম,
-কই নাহ। মন খারাপ হবে কেন?
-তুই কি কোন কারণে সেদিনের জন্য মন খারাপ করে আছিস?
-আরে নাহ। কি যে বলো না আপু।
-তুই কিন্তু সত্যি খুব হ্যান্ডসাম। যদি আমার বয়সটা আর অল্প একটু কম হইত, তাহলে হয়তো আমিই তোকে আগে প্রোপোজ করতাম। কিন্তু আমাদের পরিবার আমাদের মেনে নেবে না। তুই সত্যিই খুব ভালো ছেলে রে।
কথাগুলো বলে আপু আমার কাধে মাথা রাখল।
আর আমার মনে নতুন করে নীলা আপুর লাড্ডু ফুটলো।
যাক আল্লাহ মনে হয় এবার আমার দিকে মুখ তুলে তাকাইছে।
কিছুক্ষণ ওখানে নীলা আপুর সাথে থাকার পর নিজের ঘরে এসে ঘরটা আটকে দিয়ে ইয়ো ইয়ো হানি সিং-এর লুঞ্জি ড্যান্স গানটা গালিয়ে দিয়ে নাচা শুরু করলাম।
নতুন করে আবার শুরু হলো নীলার চ্যাপ্টার........
.
লেখাঃ- Mohammad Imran

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

হবু বউ

সকালে আরাম করে ঘুমাচ্ছি এমন সময় ফোন বাবাজি যুদ্ধ শুরু করে দিল।একটা রোমান্টিক স্বপ্ন দেখছি।আর এই সময় কোন বেটা ফোন দিল।মেজাজটাই বিগড়ে দিল।স্বপ্নটা পুরাই দেখা লাগবে নয়তো শান্তি পাবনা।তাই ফোনটা কে করেছে না দেখে কোন মতে রিসিভ করে আপনি যাকে ফোন করেছেন সে এখন রোমান্টিক স্বপ্ন দেখায় ব্যাস্ত অনুগ্রহ করে একটু পরে আবার চেস্টা করুন বলে ফোনটা কেটে দিলাম।ফোন কেটে আবার স্বপ্নের কথা ভাবছি। স্বপ্নে একটা সুন্দরি মেয়ে আমাকে চুমু দিতে আসতেছে আমিও রেডি এমন সময় মনে হলো আমাকে কেউ কিল মারছে।চোখ খুলে দেখি নিশি আমার দিকে সুর্যের মতো গরম ফুটবলের মতো বড় চোখ করে তাকায় আছে। --কিরে তুই আর আসার সময় পেলিনা।চুমুটা আর খাওয়া হলোনা। --তোর চুমুর গুষ্ঠি কিলাই।ফোন দিছিলাম আর তুই কি গাজা খুরি কথা বলে কেটে দিলি। --আমি তকে আগেও বলছি সকালে ফোন দিবিনা। --দিব একশবার দিব।আমার হবু জামাইকে আমি একশবার ফোন দিব।তাতে তোর কি হা। --আইছে আমারর হবু বউ।তোর মতো চার চোখকে আমি বিয়ে করব। --তুই করবিনা তোর বাবা করবে। --তাহলে যা আসার বাবাকেই কর --আমি কিন্তু তোরেরেরেরেরররে।। --থাক আর বলতে হবেনা।তোর ঐ রাক্ষুসি দাতের কামড় খাবার ইচ্ছা নাই।যা ব...